আমাদের দেশের নানা সামাজিক সমস্যার অন্যতম হচ্ছে যৌতুক প্রথা। এদেশের বিবাহসংক্রান্ত আইনে যৌতুক আদান প্রদান নিষিদ্ধ। তবু অধিকাংশ বিয়েতে বরপক্ষ কনেপক্ষের কাছ থেকে যৌতুক গ্রহণ করে থাকে।
বিয়ের সময় বর বা কনে বিপরীত পক্ষের কাছ থেকে যে অর্থ বা সম্পত্তি দাবি করে ও গ্রহণ করে তাকেই বলা হয় যৌতুক। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সব ক্ষেত্রেই বরপক্ষ কনেপক্ষের কাছ থেকে যৌতুক দাবি করে। এটি একটি সামাজিক কুপ্রথায় পরিণত হয়েছে।
যৌতুক একটি প্রাচীন প্রথা। প্রাচীন চীনে বিয়ের পর কনে স্বামীর ঘরে যৌতুক সঙ্গে নিয়ে যেত। এথেন্সেও বিয়ের পর কনে স্বামীর ঘরে নিয়ে যেত অর্থসম্পদ। সেখানে যৌতুক গ্রহণকে সামাজিক মর্যাদা হিসেবে দেখা হতো। বর্তমান বাংলাদেশে যৌতুক হচ্ছে বিয়ের সময় বরকে প্রদত্ত অর্থ, সম্পত্তি ও নানা ধরনের মূল্যবান আসবাব ও সরঞ্জাম। তবে বাংলাদেশের বিবাহ আইনে যৌতুক দেওয়া ও নেওয়া দুটোই নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশে যৌতুক প্রথা একটি মারাত্মক সামাজিক সমস্যা। এর পেছনে রয়েছে নানা কারণ। তবে দারিদ্র্যের কারণেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হয়। দারিদ্র্যের কারণেই বরপক্ষ কনেপক্ষের কাছে অর্থসম্পদ দাবি করে। কনের পিতার অর্থসম্পদ ব্যবহার করেই বর প্রতিষ্ঠা লাভ করতে চায়।
বাংলাদেশের অনেক সম্পদশালী মানুষ তাদের কন্যার বিয়েতে বিপুল অঙ্কের যৌতুক দেয়। ধনী পিতামাতার ধারণা যৌতুকের কারণে তাদের কন্যা স্বামীর ঘরে মাথা উঁচু করে থাকবে। কেবল দারিদ্র্য না, পুরুষ হিসেবে সমাজে জন্মগ্রহন করাই সমাজে শ্রেয় বলে বিবেচিত হওয়া কিংবা নারী হিসেবে জন্মানো মানে কম সম্মানের বলে গন্য হওয়াও যৌতুক প্রথার অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করে। এটা নারীর মর্যাদাকে অবনমিত করে। সেজন্য এ মনোভাব দূর করতে হবে। সমাজে এ মনোভাব দূর না হলে যৌতুক কেবল আইন দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। এ কারণেও যৌতুক প্রথা সমাজের গভীরে বাসা বেঁধেছে। আমাদের দেশে যৌতুক নিরোধের জন্য আইন রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এ বিষয়ে না জানার কারণেও যৌতুক প্রথা সমাজে স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। অনেক সময় এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় যৌতুক সমস্যা বেড়েই চলেছে ।
বাংলাদেশের সকল সমাজেই যৌতুক প্রথার কমবেশি প্রচলন আছে। যৌতুকের প্রভাবে সমাজজীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিবাহিত নারীর প্রতি অত্যাচার ও সহিংসতার মূল কারণ যৌতুক। যৌতুকের কারণে স্বামীর সংসারে স্ত্রীকে নিগ্রহ ভোগ করতে হয়। যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারলে অনেক ক্ষেত্রেই স্ত্রীকে সংসার ছাড়তে বাধ্য করা হয়। যৌতুকের কারণেই বিবাহবিচ্ছেদ ও কখনো কখনো স্ত্রীর প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
যৌতুকের জন্যই বিয়ের পর দাম্পত্যকলহ, নির্যাতন, স্ত্রী হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। সমাজে দারিদ্র্য, দুর্নীতি, অপরাধ প্রবণতা, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের মূলে রয়েছে এই যৌতুক সমস্যা। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে যৌতুক দেওয়া ও নেওয়া দুই-ই সমান অপরাধ।
কাজ- ১: যৌতুক সম্পর্কে তোমার পাশের সহপাঠীর সাথে (জোড়ায় কাজ) আলোচনা কর। কাজ- ২: যৌতুকের কারণে সমাজে কী কী অপরাধ ঘটতে পারে। সে বিষয়ে দলীয় আলোচনার মাধ্যমে উপস্থাপন কর। |
common.read_more